শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
নজরদিন :এবার টেকনেশিয়ান দিয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চলছে চিকিৎসা সেবা গোয়ালন্দে ডিবির অভিযানে ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার দৌলতদিয়ায় হেরোইনসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার পাংশায় সরকারি জমি থেকে অর্ধশত গাঁজার গাছ উদ্ধার রাজবাড়ীতে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ১২জনের বিরুদ্ধে মামলা ॥ ২জন গ্রেপ্তার দুই লাখ ত্রিশ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট চূড়ান্ত রাজবাড়ীর প্রতিটি থানা, ফাঁড়ি ও সার্কেল অফিস হবে জনগণের সেবাকেন্দ্র : নবাগত পুলিশ সুপার রাজবাড়ীতে ভ্যান চালক হত্যাকারীদের বিচার দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ : আইওকে মারপিট রাজবাড়ীতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অবহিতকরণ ও বাস্তবায়ন বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত গোয়ালন্দ ভিকটর ফিডস-ভিকটর ব্রীডার্স ও ভিকটর ভিলেজে মানসম্মত মুরগীর বাচ্চা তৈরি

রাজবাড়ীতে শুষ্ক মৌসুমে ভাঙ্গনরোধে পাউবো’র নেই কোন পরিকল্পনা

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৫৩৮ বার

মেহেদী হাসান : নদী বেষ্টিত জেলা রাজবাড়ী। যাকে ঘিরে রেখেছে প্রমত্তা পদ্মা। যে কারণে এ জেলাকে পদ্মা কন্যা রাজবাড়ীও বলা হয়েছে।
তথ্য বলছে, রাজবাড়ী জেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা, গড়াই, চত্রা, চন্দনা, হড়াই, মরাকুমার, যমুনা, হাজরাখালি ও সিরাজপুরসহ ছোট বড় মোট নয়টি নদী। যার মধ্যে পদ্মা, যমুনা ও গড়াই বড় বাকি ছয়টি ছোট নদী।
এ নদী ঘিরে নদী পাড়ের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। জীবিকার জন্য লড়াই প্রমত্তা পদ্মার সাথে। আবার বর্ষা মৌসুমে আশার পানির সাথে বাড়ে নদীর উর্বরতা। যে কারণে চরাঞ্চলের ফসলী জমিতে ফলে পেঁয়াজ, রসুন, পাটসহ নানা ধরনের অর্থকরী ফসল। এত এত স্বপ্ন বুকভরা আশার মাঝেও আছে হারানোর বেদনা। নদী ভাঙ্গন রাজবাড়ী জেলার একটি সবচেয়ে বড় সমস্যা। বছর জুড়েই থাকে ভাঙ্গন আতঙ্ক। নদীপারে চলে হাহাকার। আবার বসত ফসলী জমিসহ সব হারানো মানুষগুলো আশ্রয় খুঁজে সরকারী সড়কের পাশে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো ) রাজবাড়ীর তথ্যমতে, গত বর্ষা মৌসুমে রাজবাড়ী জেলার নয়টি পয়েন্টে মারাত্বক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছিল। তখন ভাঙ্গনরোধে জরুরী ভিত্তিতে নয়টি প্যাকেজে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এরমধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ৩ টি, গোয়ালন্দে ২ টি আর বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৪ টি প্যাকেজ।
বাপাউবোর তথ্যমতে, রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর দীর্ঘ ৫৭ কিলোমিটার, গড়াই নদীর দীর্ঘ ৩৮ কিলোমিটার, যমুনা নদীর দীর্ঘ ১৩ কিলোমিটার সহ অন্তত ১৫০ কিলোমিটার নদীপথ রয়েছে। যার মধ্যে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের সাথে স্থায়ী ভাবে নদী শাসন কাজ হয়েছে ৭ কিলোমিটার আর পাংশা উপজেলার হাবাসপুরে স্থায়ীভাবে নদী শাসন করা হয়েছে আড়াই কিলোমিটারসহ মোট সাড়ে নয় কিলোমিটার।
স্থানীয়দের দাবি, এখনও মারাত্বক ভাঙ্গন ঝুঁকিতে আছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোদার বাজার, মৌলবী ঘাট, সিলিমপুর, মহাদেবপুর, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রামও মুন্সি বাজার, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া, বিকয়া, সাওরাইল, পাংশা উপজেলার হাবাসপুর, বাহাদুরপুর, কেওয়া গ্রাম, বালিয়াকান্দি উপজেলার পোটরা, জামসাপুর, নারুয়া, পুশ আমলাসহ অন্তত ২০ টি পয়েন্ট।
সরেজমিনে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কেওয়াগ্রামে গিয়ে দেখাযায়, শুষ্ক মৌসুম চললেও সেখানে চলছে মৃদু ভাঙ্গন।
এ সময় কথা হয় কেওয়াগ্রামের বাসিন্দা আলম মল্লিকের সাথে। তিনি বলেন, কেওয়া গ্রামের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে গড়াই নদী। এপারে রাজবাড়ী ওপারে ডানে মাগুরা আর বামে ঝিনাইদহ। গত বর্ষা মৌসুম থেকেই কেওয়াগ্রামে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বার বার বলা সত্তে¡ও ভাঙ্গনরোধে কোন কাজ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখন যেভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত আছে তাতে আগামী বর্ষা মৌসুমে বসতবাড়ি সব নদীগর্ভে বিলিন হবে।
এদিকে, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিবাজার এলাকায়ও একই অবস্থা। সরেজমিনে ঘুরে দেখাযায়, ভাঙ্গন ঝুঁকিতে পরেছে বসত বাড়ি, কবরস্থান, মসজিদ, স্কুলসহ বহু গুরুত্বপুর্ন স্থাপনা।
এ সময় কৃষক হাবিল মিয়া বলেন, গত বর্ষা মৌসুমে আমার প্রায় পাচ বিঘা ফসলী জমি নদীর পেটে গেছে। এলাকাবাসীর মানববন্ধন ও আন্দোলনের মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী ভিত্তিতে কিছু বালুর বস্তা ফেলেছিল। ভাঙ্গন একটু কমার পর আর কেউ খোঁজ নেয়নি।
দেশের গুরুত্বপুর্ন নৌরুট রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার বাসিন্দা হারুন খাঁ বলেন, গত ৫ আগষ্টের পর প্রভাবশালীরা এ বছর দৌলতদিয়া সাত নম্বর ঘাটের কাছে পাল্লাপাল্লি করে বালু উত্তোলন করেছে। গতমাসে মানববন্ধন করার পর বালু উত্তোলন বন্ধ হয়েছে। তবে যতটুকুই কেটে তার খেসারত দিতে হবে সামনের বর্ষা মৌসুমে। ঘাটসহ শত শত বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আবার জরুরী ভিত্তিতে যেসকল এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল তার বেশিরভাগই নষ্ট করেছে স্থানীয় জেলেরা। নৌকা চালানোর কাজে ব্যাবহার করা বাঁশ (লগি) দিয়ে সব বস্তা ছিদ্র করেছে। পানি কমার ফলে যে বস্তাগুলো দৃশ্যমান হয়েছে এক শ্রেনীর অসাধু, মাদক সেবনকারী সেই বস্তাগুলো কেটে নিয়ে বিক্রি করছে। কেউ কেউ আবার সেগুলো দিয়ে নীজের ব্যবহারের জন্য বাজার করার ব্যাগ তৈরি করছে।
এ ব্যাপারে গোদার বাজার এলাকার বাসিন্দা ফারুখ হোসেন বলেন, সবার সহযোগিতা না থাকলে নদী ভাঙ্গনরোধ করা সম্ভব না। এ কাজে নদী পারের মানুষকেই বেশি ভুমিকা রাখতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের সামর্থ মত কাজ করে সেই বস্তা কেটে নেয় মাদক সেবনকারীরা। ওদের ধরে পুলিশে দেওয়া উচিৎ।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) রাজবাড়ীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম. এ শামীম বলেন, গত বর্ষা মৌসুমে রাজবাড়ীতে ভাঙ্গনরোধে জরুরী ভিত্তিতে নয়টি প্যাকেজে কাজ করা হয়েছে। এরই মধ্যে নদী ভাঙ্গন এলাকাগুলো চিহিৃত করা হচ্ছে। ভাঙ্গনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শুষ্ক মৌসুমে কোন প্রকল্প চালু নেই। আর নদী পারের জিও ব্যাগগুলো কেউ যাতে কেটে নিয়ে না যায় সেজন্য মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও স্থায়ী ব্যানার টানানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2025 RajbariProtidin.com
Theme Customized By BreakingNews