শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
নজরদিন :এবার টেকনেশিয়ান দিয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চলছে চিকিৎসা সেবা গোয়ালন্দে ডিবির অভিযানে ইয়াবা সহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার দৌলতদিয়ায় হেরোইনসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার পাংশায় সরকারি জমি থেকে অর্ধশত গাঁজার গাছ উদ্ধার রাজবাড়ীতে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ১২জনের বিরুদ্ধে মামলা ॥ ২জন গ্রেপ্তার দুই লাখ ত্রিশ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট চূড়ান্ত রাজবাড়ীর প্রতিটি থানা, ফাঁড়ি ও সার্কেল অফিস হবে জনগণের সেবাকেন্দ্র : নবাগত পুলিশ সুপার রাজবাড়ীতে ভ্যান চালক হত্যাকারীদের বিচার দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ : আইওকে মারপিট রাজবাড়ীতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অবহিতকরণ ও বাস্তবায়ন বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত গোয়ালন্দ ভিকটর ফিডস-ভিকটর ব্রীডার্স ও ভিকটর ভিলেজে মানসম্মত মুরগীর বাচ্চা তৈরি

রাজবাড়ীতে এসিআই’র ট্রাইকো-কম্পোস্ট সার কারখানার কার্যক্রম বন্ধ

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫
  • ২০৩ বার
oplus_0

সোহেল রানা : মুরগীর খামারের বিষ্ঠা ও মাছের খাদ্য, ভেজাল জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র থেকে সৃষ্ট দুর্গন্ধ পরিবেশ বিপর্যয় সহ নানা অভিযোগ উঠেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের ডিগ্রীর চর চাঁদপুর আমিন এগ্রো ফার্ম লিঃ ও অর্ণব জৈব সার কারখানায়। এলাকাবাসী পরিবেশ বিপর্যয় রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক স্থায়ীভাবে কারখানাটি বন্ধের দাবী জানিয়েছেন। এদিকে, কারখানাটির মালিকের দাবী এলাকার মানুষের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কারখানার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কারখানার ফলে এলাকার বেকার সমস্যার সমাধান ও কৃষক লাভবান হচ্ছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখাযায়, বেশ জায়গা নিয়ে সড়কের সামনে টিন দিয়ে ঘেরা। পাশে কয়েকজন মিস্ত্রি টিনের বেড়া নির্মাণে কাজ করছেন। উচু করে স্তুপ করে রাখা হয়েছে ছাই, গোবর, মুরগীর বিষ্টা, জুটস মিলের ডাস্ট। কয়েক কাজ করলেও তাদের নেই কোন স্বাস্থ্য সচেতনতার বালাই। প্যাকেটের গায়ে লেখা, এসিআই লিঃ, ২৪৫ তেঁজগাঁও শিল্প এলাকা-১২০৮। প্রায় ৪-৫শত বস্তা গুদামে রাখা হয়েছে। মুরগীর বিষ্টা সহ দুগর্ন্ধ ছড়াচ্ছিল। বাইরে সাইন বোর্ডে লেখা “ফ্যাক্টারী বাম্পার এসিআই ট্রাইকো-কম্পোস্ট (অর্গানিক ফ্যাটিলাইজার), এসিআই লিঃ, ডিগ্রির চর চাঁদপুর, খানখানাপুর, সদর রাজবাড়ী” লেখা রয়েছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়ের ৯নং ওয়ার্ডের ঘনবসতিপূর্ণ ডিগীচর চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা আমির ফয়সাল, ইমদাদুল হক বেপারী সহ কয়েকজন বলেন, এ গ্রামের বেশীরভাগ মানুষ নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় প্রকৃতির। গ্রামের নির্মল পরিবেশে ঝাঁমেলা বিহীন নির্ঝঞ্জাট জীবনযাপনে অভ্যস্ত। গত ১৭-১৮ বছরে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আমিন এগ্রো ফার্ম লিঃ ও অর্ণব জৈব সার কারখানার স্বত্বাধিকারী মোঃ নুরুল আমিন শেখ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুর রহমানের (আওয়ামী লীগ নেতা কেরামত কাজী এমপির ঘনিষ্ঠজন) সহায়তায় জাতীয় পোল্টি উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৮ ও এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট আইন (পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ (সংশোধিত ২০০২), বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০), শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬, পশু রোগ আইন, ২০০৫), সার ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৬, সার (ব্যবস্থাপনা) বিধিমালা, ২০০৭ এবং আবাসিক এলাকায় অবস্থিত খামারের বর্জ্য অপসারণ নীতিমালা ভঙ্গ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে মুরগীর ফার্ম, হ্যাচারী (ব্রয়লার/লেয়ার, প্যারেন্ট স্টক, ব্রিডিং) ও খামারের ময়লা আবর্জনা, বিষ্ঠার সমন্বয়ে মাছের খাদ্য এবং জৈব সার কারখানা স্থাপন করে। এতে গ্রামের নির্মল ও বিশুদ্ধ পরিবেশকে প্রতিনিয়ত দূষিত করে জনস্বাস্থ্যের ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে চলছে। উন্মুক্ত ভাবে খামারের আশপাশে মুরগির বিষ্ঠা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকায়, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মরা মুরগী, নষ্ট বাচ্চা, পচা ডিম ধ্বংস করার সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় তীব্র দুর্গন্ধের কারণে গ্রামে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বিশেষ করে ভোরে, দুপুরে, সন্ধ্যায় এবং মাঝে মাঝে রাতের বেলা তীব্র দুর্গন্ধে শ্বাস নেওয়া যায় না। বৃষ্টির পর যখন রোদ ওঠে তখন দুর্গন্ধ আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। দক্ষিণের বাতাসে ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ রাখতে হয়। মাঝে মাঝে বিষ্ঠার গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়। নামাজরত অবস্থায় মুসুল্লিদের বমি ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়। শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। উন্মুক্ত ভাবে জৈব সার কারখানায় মুরগির বিষ্ঠাসহ নানা রকম ময়লা-আবর্জনা রাস্তার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বোঝা বহণকারী ট্রাকে করে আনা-নেওয়া করায় রাস্তায় ময়লা আবর্জনা পড়ে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ও রাস্তাঘাটও দ্রুত চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। বিষ্ঠা ও সার কারখানার ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে বায়ুদূষণ হওয়ার ফলে এলাকায় বসবাসকারী লোকজন বিশেষভাবে শিশুরা সর্দি ও কাশি, বমি, শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি, চর্মরোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগে ভুগছে।
তারা বলেন, ফার্মের ময়লা-আবর্জনার কারণে মশা-মাছির উপদ্রব বহুগুনে বেড়ে যায়। এতে মশা-মাছিবাহিত নানা রোগে প্রায়ই আক্রান্ত হয় গ্রামের বাসিন্দারা। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি খাবার টেবিল ও রান্নার হাড়ি-পাতিল, গ্লাস, প্লেট, গামলার উপরে বসে থাকে। এমনকি খাবার খাওয়ার সময়ও খাবার প্লেট ছেয়ে ধরে থাকে মাছি। খামারের পার্শ্ববর্তী সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষকে প্রতিদিন দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরে বহুকষ্টে যাতায়াত করতে হয়। খামারের মুরগী সারাক্ষণ উচ্চ শব্দে চিৎকার চেঁচামেচি ডাকাডাকি করার ফলে গ্রামের মানুষের ঘুমে প্রচন্ড ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষভাবে বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এছাড়াও সকাল বেলা মসজিদের মক্তব্যে আরবী পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় চরম ব্যাঘাত ঘটে। ফার্মের মরা মুরগী, পচা ডিম, ত্রুটিপূর্ণ জীবিত বাচ্চা, খামারের বর্জ্য ও ময়লা আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে যত্রতত্র ফেলে রাখায় ও মাছের খাদ্য, জৈব সার তৈরি করতে উন্মুক্ত স্থানে পুড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোয়া ও দুর্গন্ধে গ্রামের পরিবেশ দিন দিন যেমন ভারসাম্যহীন ও বিপর্যস্থ হয়ে উঠছে। তেমনিভাবে মৃত মুরগি, পচা ডিম, নষ্ট বাচ্চা, কুকুর, বিড়াল, শেয়াল, পাখি ও শকুন ভক্ষণ করার ফলে ভক্ষণকারী প্রাণী ও বাতাসের মাধ্যমে জীবাণু অতি সহজে ও খুবই দ্রুত ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় জনস্বাস্থ্য চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পতিত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জৈব সার কারখানাটি নিবন্ধন ছাড়াই দীর্ঘদিন যাবৎ ভেজাল জৈব সার উৎপাদন করেছিল। ফলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৫ মার্চ রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারিয়া হকের নেতৃত্বে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জনি খানের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলে ৩ হাজার বস্তার উপরে এসিআই কোম্পানির মোড়কে ভেজাল জৈব সারের সন্ধান পায়। তাৎক্ষণিকভাবে জৈব সার কারখানাটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে এবং ল্যাব টেস্ট করার জন্য ভেজাল জৈব সারের নমুনা নিয়ে যায় (সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করলেও রাতের আঁধারে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভেজাল জৈব সার উৎপাদন করে বড় বড় ট্রাকে করে ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার ঈশানগোপাল ইউনিয়নের আরিফ বাজার দিয়ে পাচার করে যাচ্ছে নিয়মিত ভাবেই)।
তারা আরও বলেন, রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার মাধ্যমে যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এ পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য পাঠালে সেখানেও জৈব সার তৈরির ৩টি উপাদান ঘাটতি আছে বলেও অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়। এ জৈব সার এসিআই কোম্পানির ব্যানারের যশোর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হওয়ার মাধ্যমে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এবং দেশের কৃষিখাতের উৎপাদন ব্যাহত হয়ে দেশের ক্ষতি হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা কালে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা বহির্ভূত ৪টি গুরুত্বর অনিয়ম সরেজমিনে দেখতে পান, জৈব সার কারখানার কোন সীমানা প্রাচীর নেই, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নাই, জৈব সার প্রক্রিয়াকরণের জন্য চাতাল-পাকা ফ্লোর নাই, উন্মুক্ত জায়গায় খোলামেলা ভাবে স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় উপাদান রেখে প্যাকেটজাত/ তৈরি করা হয় ৪. প্যাকেটজাত জৈব সার সংরক্ষণের জন্য যথাযথ গুদাম ঘর নেই, আবর্জনা পাক্কা রাস্তার উপরে যত্রতত্র রাখা, কারখানার ৩০-৫০ গজের ভিতরে ঘনবসতি (জিন্নাহ-লিলির বাড়ী), খোলা স্থানে পল্ট্রি মুরগীর মল-লিটার পচানো, ছাই-তামাকের গুড়া খোলা জায়গায় উন্মুক্ত ভাবে রাখা, শিশু শ্রমিক নিয়োগ (রাহুল (১১), নাজমুল (১৩))।
আমিন এগ্রো ফার্ম লিঃ ও অর্ণব জৈব সার কারখানার স্বত্বাধিকারীঃ মোঃ নুরুল আমিন শেখ বলেন, এ কারখানাটি সম্পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে এসিআই। আমি শুধু দেখাশুনা করি। উৎপাৎনের ক্ষেত্রে অনেক সময় তারতম্য হয়। তবে এটি সম্পুর্ণ পরিবেশ বান্ধব। এলাকার লোকজনের যাতে কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে কারখানার মেরামত কাজ চলছে। আশা করছি কৃষকের উপকার হয়, সে ধরণের কাজই এখানে হবে।
রাজবাড়ী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ হারুন-অর রশীদ বলেন, আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। উপজেলা প্রশাসন কারখানাটির কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। কিছু অসঙ্গতি নজরে এসেছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট আকারে প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারিয়া হক বলেন, জৈব সার কারখানাটিতে সুনির্দ্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তার সকল কার্যক্রম স্থগিত করে কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জনি খান বলেন, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করাসহ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্টে উৎপাদিত ট্রাইকো-কম্পোস্ট সারে অর্গানিক কার্বণ, ফসফরাস ও পটাশিয়াম ঘাটতি পাওয়া যায়। এ কারণে কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। সার উৎপাদন করে পরীক্ষা ছাড়া বাজারজাত করতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এসিআই ট্রাইকো-কম্পোস্ট সারের বস্তায় থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে অপরপ্রান্ত থেকে ফোন রিসিভ করে নিজেকে এসিআই ইয়াহামা মটরসের বলে প্রকাশ করেন। নাম জিজ্ঞাসা করলে রং নাম্বার বলে কেটে দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2025 RajbariProtidin.com
Theme Customized By BreakingNews