বাসস : বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশের সমস্যা সরাসরি শুনে দ্রæত সমাধানের লক্ষ্যে চীন ও কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রাতঃরাশ সভা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনা বিনিয়োগকারী একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ ঘোষণা দেন। প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এ অংশ নিতে বর্তমানে ঢাকা সফর করছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গৃহীত বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও শ্রম সংক্রান্ত সংস্কার পদক্ষেপসমূহ বাংলাদেশে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার অধিকসংখ্যক শিল্পকারখানা স্থানান্তরে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, ‘গত আট মাসে আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করতে কাজ করেছি। এর আগে কখনও এতো অনুক‚ল পরিবেশ ছিল না।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, প্রতি মাসের ১০ তারিখে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কোরিয়ান ও চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রাতঃরাশ সভার আয়োজন করবে। এসব সভা বিডা আয়োজন করলেও তিনি কিছু সভায় ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকে বিনিয়োগকারীদের নানা সমস্যা ও মতামত শুনবেন।
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ গ্রহণ ও দ্রæত সমাধানের জন্য একটি হটলাইন ও কল সেন্টার চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘যেকোনো বিনিয়োগকারী এই নম্বরে কল করে অভিযোগ জানাতে পারবেন এবং আমরা তার উপযুক্ত জবাব দেবো।’
বৈঠকে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, পরিবহন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেক্সটাইল, মোবাইল টেলিকম, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, লজিস্টিকস ও আইটি সেবাসহ বিভিন্ন খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী কমপক্ষে ৩০ জন বিশিষ্ট চীনা বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করেন।
এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মেইনল্যান্ড হেডগিয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট পলিন এনগান, যেটি এই খাতে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান।
অধ্যাপক ইউনূস স¤প্রতি বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। প্রেসিডেন্ট শি চীনা শীর্ষ কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তার এই আন্তরিকতা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছে।’
চীনা কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা চট্টগ্রামের চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মোংলায় পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যেখানে চীন একটি সমুদ্রবন্দর আধুনিকায়ন করবে।
প্রধান উপদেষ্টার আহŸানের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন কোম্পানি ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে তাদের দক্ষিণ এশিয়ার উৎপাদন ও অপারেশন হাবে পরিণত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি প্রস্তুত বাজার রয়েছে এবং এখান থেকে নেপাল ও ভুটানের মতো স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতেও পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব।’
কিছু বৃহৎ চীনা কোম্পানি বৈদ্যুতিক যানবাহনে (ইভি) রূপান্তর, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদন, উইন্ড টারবাইন ও অফশোর ফোটোভোলটাইক সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির খাতেও বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এর আগে এদিন কয়েক ডজন দক্ষিণ কোরিয়ান বিনিয়োগকারী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।